সাইয়্যিদুল আওলিয়া, মাহবূবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী, গওছুল আ’যম, মুজাদ্দিদুয যামান, সুলত্বানুল আরিফীন, মুহিউদ্দীন, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি


Image result for হযরত বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানী জিবনী


সাইয়্যিদুল আওলিয়া, মাহবূবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী, গওছুল আ’যম, মুজাদ্দিদুয যামান, সুলত্বানুল আরিফীন, মুহিউদ্দীন, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি (১)


মহান আল্লাহ পাক তিনি এক লক্ষ চব্বিশ হাজার মতান্তরে দুই লক্ষ চব্বিশ হাজার নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে এ পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। শুধু রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের সংখ্যাই হচ্ছে তিনশত তেরজন। অপর বর্ণনায় রয়েছে তিনশত পনের জন।
উনারা সবাই জিন-ইনসানকে আল্লাহ পাক উনার দিকে আহ্বান করেছেন, মা’রিফাত-মুহব্বত হাছিলের শিক্ষা দিয়েছেন। তাদেরকে করেছেন ইছলাহ বা পরিশুদ্ধ। উনাদের এই কাজে খিদমতের জন্য আল্লাহ পাক কতিপয় ব্যক্তিত্বকে মনোনিত করেছেন, যাদেরকে আমরা আওলিয়ায়ে কিরাম হিসেবে জেনে থাকি। মূলত: এই এক লক্ষ চব্বিশ হাজার মতান্তরে দুই লক্ষ চব্বিশ হাজার নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত আগত অসংখ্য-অগণিত আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা প্রত্যেকেই জিন-ইনসানের প্রতি আল্লাহ পাক উনার বিশেষ এক নিয়ামত, দয়া, দান, ইহসানেরই বহিঃপ্রকাশ। কালাম পাক-এর এই আয়াত শরীফখানা সেক্ষেত্রে সেদিকে দালালত করেছে-
لقد من الله على المؤمنين اذ بعث فيهم رسولا من انفسهم يتلوا عليهم اياته ويزكيهم ويعلمهم الكتاب والحكمة وان كانوا من قبل لفى ضلل مبين.
অর্থ: আল্লাহ পাক মু’মিনগণের প্রতি বিশেষ অনুগ্রহ করেছেন। তিনি তাদের মাঝে একজন রসূল পাঠিয়েছেন। যিনি তাদেরকে উনার আয়াত শরীফসমূহ তিলাওয়াত করে শুনান। তাদেরকে ইছলাহ (পরিশুদ্ধ) করেন, কিতাব শিক্ষা দেন, হিকমত শিক্ষা দেন। যদিও তারা পূর্বে সুষ্পষ্ট গোমরাহীতে নিমজ্জিত ছিল। (সূরা আলে ইমরান-১৬৪)
উল্লেখ্য যে, হযরত আওলিয়ায়ে কিরামগণ উনারা হচ্ছেন হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের নায়িব বা প্রতিনিধি, স্থলাভিষিক্ত। আর আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি হচ্ছেন সর্বশেষ নবী ও রসূল। উনার পরে আর কোন নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম আসবেন না। নুবুওওয়াত ও রিসালতের ধারা বন্ধ হয়েছে।
তবে যাঁরা উনার প্রতিনিধিত্ব করবেন, নায়িব হবেন উনাদের আগমনের ধারা কিয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। ইমাম, মুজতাহিদ, মুজাদ্দিদ, ফক্বীহ, ছূফী, গওছ, কুতুব, ওলী, আবদাল, নাকিব, নুযাবা ইত্যাদি সবাই হচ্ছেন আখিরী রসুল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নায়িব বা প্রতিনিধি, স্থলাভিষিক্ত।
সাইয়্যিদুল আওলিয়া, মাহবুবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী, মুজাদ্দিদে যামান, সুলত্বানুল আরিফীন, গওছুল আ’যম, মুহিউদ্দীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হচ্ছেন উনাদের মধ্যে বিশেষ মর্যাদাসম্পন্ন, মহান ব্যক্তিত্ব। তিনি ছিলেন সেই যামানার মুজাদ্দিদ, ইমাম, গওছ, দ্বীন জিন্দাকারী, উম্মাহ’র জন্য রহমত স্বরূপ। পূর্ববর্তী অনেক আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণই উনার সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন। উনার শান-মান, মর্যাদা-মর্তবার আলোচনা করেছেন।

পূর্ববর্তী আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের ভবিষ্যদ্বাণী

আল্লাহ পাক উনার এমন অনেক ওলী রয়েছেন যাঁদের মর্যাদা-মর্তবার বিষয়টি সম্পর্কে আওলিয়ায়ে কিরামগণ উনারা পূর্বেই অবহিত হয়েছেন। প্রচার ও প্রকাশ করেছেন। সেই সমস্ত মহান ব্যক্তিত্বের অন্যতমত হচ্ছেন সাইয়্যিদুল আওলিয়া মাহবুবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী, আওলাদে রসূল, শায়খ সাইয়্যিদ মুহিউদ্দীন হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি।
উনি দুনিয়াতে তাশরীফ আনার অনেক পূর্ব থেকে ইমাম-মুজতাহিদ ও আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা সবাই নিজ নিজ যুগে ও নিজ মুরীদ, মু’তাকিদ মুহিব্বীন, আশিকীনদের মাঝে উনার শান-মান-মর্যাদা মর্তবার আলোচনা করেছেন। উনার পরিচয় বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরেছেন। আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা এই সুসংবাদ কখনো স্বপ্নে, কাশফে, মোরাকাবায় বিভিন্নভাবে অবগত হতেন এবং প্রচার প্রসার করতে আদিষ্ট হয়েছেন। (চলবে)

হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন।

https://asaduzzaman347.blogspot.com



সাইয়্যিদুল আওলিয়া, মাহবূবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী, গওছুল আ’যম, মুজাদ্দিদুয যামান, সুলত্বানুল আরিফীন, মুহিউদ্দীন, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি (২)


হযরত ইমাম আবুল হাসান শাত্বনুনী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিশ্বখ্যাত কিতাব æবাহজাতুল আসরার”-এর ৬ষ্ঠ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন, হযরত শায়েখ আবু বকর ইবনে হাওয়ার রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি নিজের মুরীদ, মু’তাকিদীন, মুহিব্বীনগণের মাঝে হযরত আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের জীবনী মুবারক আলোচনা করতেন। তিনি প্রায়ই বলতেন, ইরাকে একজন আজমী (অনারবী) ব্যক্তিত্বের আবির্ভাব ঘটবে। তিনি সমস্ত লোকের মধ্যে সবচেয়ে উঁচু মর্যাদাসম্পন্ন হবেন। উনার মুবারক নাম হবে হযরত আব্দুল কাদির রহমতুল্লাহি আলাইহি। উনি বাগদাদ শরীফ-এ অবস্থান করবেন। তিনি বলবেন, æআমার এই ক্বদম মুবারক ওলীআল্লাহগণ উনাদের গর্দানের উপর। উনার যামানার সকল ওলীআল্লাহগণই উনার সেই কথা মুবারক মেনে নিবেন। তিনি হবেন একক মর্যাদা-মর্তবা সম্পন্ন মহান ব্যক্তিত্ব।
হযরত শায়েখ আবু আহমদ আব্দুল্লাহ ইবনে আহমদ ইবনে মুসা রহমতুল্লাহি আলাইহি র্যাদ পাহাড়ে নির্জনতা অবলম্বন করা কালীন সময়ে একদিন হঠাৎ বলে উঠলেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আজমী ভূমিতে (ইরান) একজন সন্তান তাশরীফ আনবেন, উনার অসংখ্য-অগণিত কারামত প্রকাশিত হবে। আর সমস্ত আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের উপর উনার শ্রেষ্ঠত্ব হবে।
তিনি বলবেন, আমার এই ক্বদম মুবারক সমস্ত আওলিয়ায়ে কিরাম উনাদের গর্দানের উপর। একথা শুনে সেই সময় আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনাদের নিজ নিজ গর্দান মুবারক ঝুঁকিয়ে দিবেন। উনার কারণে সে যামানার সমস্ত লোকই সম্মানিত ও মর্যাদাবান হবেন। যে ব্যক্তি উনাকে দেখবে, ছোহবত লাভ করবে সে অফুরন্ত ফায়দা হাছিল করবে। সুবহানাল্লাহ! (বাহজাতুল আসরার-৭)
গাউছুল আ’যম, সাইয়্যিদুল আওলিয়া, মুজাদ্দিদে যামান, মুহিউদ্দীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি যুবক বয়সে তাজুল আরিফীন হযরত আবুল ওয়ালিফা কাকীন রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার জিয়ারতের (সাক্ষাৎ) জন্য বাগদাদ শরীফ-এ আসা-যাওয়া করতেন। যখনই হযরত আবুল ওয়ালিফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনাকে দেখতেন তখনই উনার সম্মানার্থে দাঁড়িয়ে যেতেন। আর উপস্থিত মুরীদ-মু’তাকিদগণকে বলতেন যে, তোমরা ওলীআল্লাহ উনার সম্মানার্থে দাঁড়িয়ে যাও। অধিকাংশ সময়ই তিনি একথা বলতেন, এই যুবক তথা গাউছুল আ’যম, সাইয়্যিদুল আওলিয়া, হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সম্মানার্থে যদি কেউ না দাঁড়ায় তাহলে সে কার সম্মানার্থে দাঁড়াবে? অর্থাৎ তিনি সম্মান-ইজ্জত পাওয়ার সর্বাধিক হক্বদার।
লোকেরা অসংখ্যবার উনার থেকে এরূপ কথা শুনতে পেয়েছেন। যার কারণে মুরীদ-মু’তাকিদগণ একদিন এর হিকমত বা রহস্য জানতে চাইলেন যে, কে এই যুবক, যাঁর সম্মান প্রদর্শনের ব্যাপারে আপনি সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করেন, তাগিদ দিয়ে থাকেন? তখন তিনি বললেন, ওই যুবকের উপর এমন একটি সময় আসবে, যখন আম (সাধারণ) খাছ (বিশিষ্ট) সবাই উনার ছোহবতের মোহতাজ (মুখাপেক্ষী) থাকবে। তিনি যা বলবেন, তা সত্যে পরিণত হবে। তিনি বলবেন, ওলীআল্লাহগণ উনাদের গর্দানের উপর আমার ক্বদম মুবারক। একথা শুনে সমস্ত ওলীআল্লাহ উনারা নিজেদের গর্দান উনার সম্মানার্থে ঝুঁকিয়ে দিবেন। কারণ, তিনিই হবেন সেই যুগের কুতুব। কাজেই, তোমাদের মধ্যে যদি কেউ সেই সময় পায় তাহলে তার আবশ্যক হবে উনার খিদমত করা। (বাহজাতুল আসরার-৮)
আল্লামা হযরত শায়েখ আক্বীল মুনজিরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার খিদমতে আরয করা হলো যে, এখন কুতুবুল আলম কে? তিনি জাওয়াবে বললেন, বর্তমান যামানার যিনি কুতুব, তিনি এখন মক্কা শরীফ-এ অবস্থান করছেন। তিনি এখনো প্রকাশিত হননি। ওলীআল্লাহগণ উনারা ব্যতীত অন্য কেউ বিষয়টি জানে না। জেনে রেখো, অতিশীঘ্রই একজন যুবকের প্রকাশ ঘটবে। একথা বলে তিনি ইরানের দিকে ইশারা করলেন। সেই যুবক হবেন আজমী বা অনারবী। তিনি বাগদাদ শরীফ-এ লোকদেরকে ওয়াজ-নছীহত করবেন। উনার কারামত আম-খাছ সবার কাছেই পৌঁছবে। সবাই উনার কারামতের স্বীকৃতি দিবেন। তিনি হবেন উনার যামানার কুতুব। তিনি বলবেন, আমার ক্বদম মুবারক সমস্ত ওলীআল্লাহ উনাদের স্কন্ধের উপর। আর আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ আপন আপন কাঁধ মুবারক উনার খিদমতে ঝুঁকিয়ে দিবেন। সবাই উনার আনুগত্য হবেন। আমি যদি সে যামানা পেতাম আমিও উনার খিদমতের জন্য আমার গর্দান বাড়িয়ে দিতাম। যে ব্যক্তি উনার কারামত, বুযুর্গীকে সত্য বলে মেনে নিবে সে অশেষ কল্যাণের অধিকারী হবে। (বাহজাতুল আসরার-৯)


সাইয়্যিদুল আওলিয়া, মাহবূবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী, গওছুল আ’যম, মুজাদ্দিদুয যামান, ইমামুর রাসিখীন, সুলত্বানুল আরিফীন, মুহিউদ্দীন, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি (১৪)



শিক্ষকতা:
শায়খুল উলামা ওয়াল মাশায়িখ হযরত আবু সাঈদ মুবারক মাখযূমী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি মাদরাসায়ে নিযামিয়া-এর অন্যতম সুযোগ্য মুয়াল্লিম বা অধ্যাপক ছিলেন। সাইয়্যিদুল আওলিয়া, ইমামে রব্বানী, মাহবূবে সুবহানী, মুহিউদ্দীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ছাত্র অবস্থায় উনার সেই মাদরাসায়ে নিযামিয়া উনার শিক্ষার্থী হিসেবে যোগদান করলেন। তিনি উনাকে অত্যন্ত স্নেহ ও যত্ন করতেন এবং উনার তা’লীম-তরবিয়ত বা শিক্ষা-দীক্ষার প্রতি বিশেষ নজর রাখতেন। তিনি ছিলেন তৎকালীন বাগদাদ শরীফ-উনার একজন শ্রেষ্ঠ আলিম, খ্যাতনামা শিক্ষাবিদ এবং অত্যন্ত কামিল বুযূর্গ। পরবর্তীতে তিনি নিজে একটি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করে নিজেই তাতে শিক্ষা দান করতেন।
ছাত্র অবস্থায় সাইয়্যিদুল আওলিয়া, ইমামে রব্বানী, মাহবূবে সুবহানী, মুহিউদ্দীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার তীক্ষè ধীশক্তি, অপরিসীম যোগ্যতা, কর্মদক্ষতা, কর্তব্যপরায়ণতা, দৃঢ়তা এবং অদম্য আগ্রহ-উদ্দীপনার পরিচয় পেয়ে তিনি নিজের এই সুযোগ্য ছাত্রটির প্রতি অত্যন্ত সুধারণা এবং উচ্চাকাঙ্খা পোষণ করে আসছিলেন যে, তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অত্যন্ত নৈকট্যপ্রাপ্ত হবেন। উনারই মাধ্যমে ইলম উনার সিলসিলা ক্বিয়ামত পর্যন্ত জারি থাকবে। এবার সেই ছাত্রই যখন বাগদাদ শরীফ উনার বাহির থেকে অধিকতর যোগ্যতাসম্পন্ন হয়ে ফিরে আসলেন, তখন তিনি উনার হাতে স্বীয় মাদরাসার শিক্ষকতা ও পরিচালনার সম্পূর্ণ দায়িত্বভার আগ্রহের সাথে তুলে দিলেন। সাইয়্যিদুল আওলিয়া, ইমামে রব্বানী, মাহবূবে সুবহানী, মুহিউদ্দীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিও এ জাতীয় একটি কাজের জন্য অতীব আগ্রহান্বিত ছিলেন। কারণ শিক্ষকতা বা শিক্ষাদান, যেটা আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খাছ সুন্নত। উপরন্তু তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন-
ان الله وملئكته واهل السماوات والارض حتى نملة فى حجرها حتى حوت فى جوفها يصلون على معلم الناس الخير.
অর্থ : “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা, আসমানবাসী, যমীনবাসী এমনকি গর্তের পিপীলিকা এবং সমুদ্রের মাছ পর্যন্ত সবাই শিক্ষাদানকারীর প্রতি ছলাত-সালাম পাঠ করেন।”
অতএব, তিনি তৎকালীন মৃতপ্রায় দ্বীন ইসলাম উনার কিছু খিদমত করার সুযোগ পেয়ে খুবই খুশি হলেন। এ মাদরাসায় শিক্ষকতার মাধ্যমেই উনার কর্মময় মুবারক জীবন শুরু হলো।
উস্তাদ প্রদত্ত মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত হয়ে তিনি গভীর মনোযোগ ও অত্যন্ত দক্ষতার সাথেই উনার শিক্ষকতা এবং পরিচালনার দায়িত্ব পালন করতে লাগলেন। তৎকালীন সময়ে উনার ইলিম-হিকমত, তাক্বওয়া-পরহেযগারিতা এবং কর্মদক্ষতার সাথে তুলনা করার মতো আর কেউ ছিল না। তাই একাধারে যেমন মাদরাসার শিক্ষার্থীবৃন্দ উনার মতো অতুলনীয় শিক্ষক লাভ করে ধন্য হয়েছিল। তেমনি বাগদাদবাসীগণ দীর্ঘদিন পরে তাদের প্রাণের লোক উনাকে ফিরে পেয়ে আনন্দে আপ্লুত হয়ে পড়লেন।
সাইয়্যিদুল আওলিয়া, ইমামে রব্বানী, মাহবূবে সুবহানী, মুহিউদ্দীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার জ্ঞান লাভ কেবল মাদরাসায় অধ্যয়নের ভিতরই সীমাবদ্ধ ছিল না। বরং উনার ইলিম ও পবিত্র হিকমত বিকশিত হয়েছিল আলোক রশ্মির মূল উৎস স্থল থেকে। যেখানে সকল জ্ঞান ও সত্যের উৎস মুখ, সেখান থেকেই উনার হৃদয়ে ইলিম ও হিকমতের অমিয়ধারা প্রবাহিত হয়েছিল। মহান আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের থেকে তিনি খাছভাবে তা’লীম-তরবিয়ত পেয়েছেন তথা ইলমে লাদুন্নী পেয়েছেন। ফলে উনার শিক্ষাদান পদ্ধতি যে ছাত্র মহলে কত ব্যাপক ও গভীরভাবে সাড়া জাগিয়েছিল, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তিনি প্রাচীন শিক্ষানীতিকে পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করে তা এক নতুন ছাঁচে ঢেলে সাজিয়েছিলেন। মাত্র অল্প কিছুদিনের মধ্যেই উনার সুনাম-স্খ্যুাতি বিভিন্ন দেশে স্রোতধারার ন্যায় ছড়িয়ে পড়লো। ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল থেকে জ্ঞানান্বেষী, শিক্ষার্থীগণ এবং আল্লাহ পাক উনার মুহব্বত-মা’রিফাত তালাশীগণ দলে দলে উনার মাদরাসায়, উনার ছোহবতে এসে হাজির হলেন। সকলে উনার নিকট বাইয়াত হয়ে উনার নিকট পবিত্র ইলিম ও হিকমত তালাশ করাকে পরম গৌরবের বিষয় বলে মনে করছিল।
ছাত্রজীবনে সাইয়্যিদুল আওলিয়া, ইমামে রব্বানী, মাহবূবে সুবহানী, মুহিউদ্দীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি যে তেরটি বিষয়ে গভীর ব্যুৎপত্তি অর্জন করেছিলেন, সেই তেরটি বিষয়েরই তিনি অধ্যাপনা করতেন। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র তাফসীর শরীফ, ফিক্বাহ, উছূল, সাহিত্য, ক্বাওয়ায়িদ বা ব্যাকরণ এবং মুয়ামিলাত-মুয়াশিরাত বা লেনদেন, জীবন-যাপন পদ্ধতি শিক্ষাদান করতেন। আবার যোহরের পর থেকে ইশা পর্যন্ত তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার অনুবাদ, তাওহীদ (একত্ববাদ), বিভিন্ন মাসয়ালা-মাসায়িল এবং অন্যান্য জরুরী বিষয়সমূহ শিক্ষা দিতেন। এমনিভাবে তিনি শিক্ষার্থীদেরকে বিভিন্ন বিষয়ে তা’লীম-তরবিয়ত দানের মাধ্যমে আদর্শ মানুষ, আদর্শ আলিম হিসেবে গড়ে তুলতে লাগলেন।

সাইয়্যিদুল আওলিয়া, মাহবূবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী, গওছুল আ’যম, মুজাদ্দিদুয যামান, ইমামুর রাসিখীন, সুলত্বানুল আরিফীন, মুহিউদ্দীন, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি (২০)


সাইয়্যিদুল আওলিয়া, মাহবূবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী, হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুরিদানগণের মর্যাদা
শায়খ আবু মুহম্মদ আব্দুল লতিফ বিন শায়েখ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন- আমার আব্বাজান রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন- শায়েখ হাম্মাদ দাব্বাস রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে প্রতি রাত্রে মধু মক্ষিকার শব্দের মত এক প্রকার গুঞ্জন শুনা যেত। সায়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সেই সময় উনার কাছে মুবারক ছোহবতে আসা-যাওয়া করতেন। লোকেরা উনার কাছে আরয করলেন, তিনি যেন শায়েখ হামাদ দাব্বাস রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে সেই শব্দ মুবারক সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। তিনি সে সম্পর্কে হযরত হাম্মাদ দাব্বাস রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কাছে জিজ্ঞেস করলেন। তিনি বলেন- আমার বার হাজার মুরিদ আছে। আমি খুবই দ্রুততার সাথে তাদের নাম ধরে ডাকি এবং তাদের চাওয়া-পাওয়ার কিছু আছে কিনা জিজ্ঞেস করি, যেন আমি মহান আল্লাহ পাক উনার কাছ থেকে মনজুর করায়ে নিতে পারি। আমার কোন মুরিদ ততক্ষণ মৃত্যুবরন করে না, যতক্ষণ তার তওবা কবুল না হয় বা এক মাসের মধ্যে উনার গুনাহ মাফ করে দেয়া হয় না। এভাবে মহান আল্লাহ পাক উনার রহমত এসব মুরিদদের উপর পড়ে থাকে, যারা শায়েখ হামাদ দাব্বাসর রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার হাতে বাইয়াত হন। এ কথা শুনে গাউসুল আ’যম সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি শায়েখ হাম্মাদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে বললেন- যদি মহান আল্লাহ তায়ালা আমাকে এ মরতবা দান করেন, তাহলে আমি মহান আল্লাহ তায়ালা উনার পক্ষ থেকে এ প্রতিশ্রুতি নিয়ে নেব, যেন কিয়ামত পর্যন্ত আমার কোন মুরিদ ততক্ষণ ইন্তেকাল না করে যতক্ষণ তার তওবা কবুল করা না হবে । আমি এ প্রতিশ্রুতির জিম্মাদার হবো।
শায়খ আবুল কাসেম ওমর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন- সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল- যদি কোন ব্যক্তি আপনাকে মুহব্বতের সাথে স্মরণ করে, কিন্তু আপনার মুরিদ হওয়ার সৌভাগ্য না হয় কিংবা আপনার থেকে খিলাফতের খেরকা (জামা) না পায়, সে কি আপনার সহানুভূতি তথা ফায়েজ-তাওয়াজ্জুহ লাভকারী লোকদের অন্তর্ভুক্ত হবে? তিনি বলেন- যে ব্যক্তি কেবল নাম মুবারক উনার সাথে সম্পর্ক রাখবে বা অন্তরে আমার প্রতি ভাল ধারণা পোষণ করবে, মহান আল্লাহ তায়ালা তার তওবা কবুল করবেন, যদিওবা সে আমার থেকে অনেক দূরে থাকে। মহান আল্লাহ পাক উনার কসম, মহান আল্লাহ পাক তিনি আমার সাথে ওয়াদা করেছেন যে, তিনি আমার মুরীদ-মু’তাকিদ, মুহ্বিীন, আশিকীন, আমার নাম জপকারী ও আমার প্রতি ভাল ধারণা পোষণকারীদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। তিনি আরও বলেছেন- যদি আমার নাম মুবারক স্মরণকারী কারো দোষত্রুটি বা গুনাহ পশ্চিমপ্রান্তে প্রকাশ পায় এবং আমি পূর্ব প্রান্তে থাকি, তখনও আমি তার হিফাজতের জিম্মাদার হবো এবং তার দোষ-ত্রুটি গোপন করবো। আমাকে এক চোখের পলক এক দীর্ঘ আমল নামা দেয়া হয়েছে, যার মধ্যে আমার মুরিদগণের নাম লিখা আছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত আগমণকারী মুহ্বতকারীদের নাম উল্লেখ আছে। আমাকে সুসংবাদ দেয়া হয়েছে যে এসব লোকদেরকে আমার খাতিরে ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে। আমি হাযরত মালিক ফেরেশতা আলাইহিস সালাম উনাকে (দোযখের দাররক্ষী) জিজ্ঞেস করেছি, আপনার কাছে আমার মুরীদ-মু’তাকিদ, মুহিব্বীনদের কেউ আছে কি? তিনি বললেন না। মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! আমার হাত আমার মুরিদগণের উপর ঐ রকম প্রসারিত, যেভাবে যমীনের উপর আসমানের ছায়া। সুবহানাল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক উনার জালালিয়াত ও ইজ্জতের কসম, আমি ততক্ষণ জান্নাতে প্রবেশ করবো না, যতক্ষণ আমি আমার সমস্ত মুরিদগণকে জান্নাতে প্রবেশ করাতে না পারবো। (যুবদাতুল আছার, গাউসুল অরা-৭৫)

সাইয়্যিদুল আওলিয়া, মাহবূবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী, গওছুল আ’যম, মুজাদ্দিদুয যামান, ইমামুর রাসিখীন, সুলত্বানুল আরিফীন, মুহিউদ্দীন, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি (২১)


কারামত বা অলৌকিক ঘটনা
كرامة (কারামত) শব্দের অর্থ: সম্মান, মর্যাদা, মহত্ত্ব, অলৌকিক ঘটনা। সাধারণ স্বভাবের বিপরীত যে সকল ঘটনা হযরত আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের দ্বারা প্রকাশিত হয় তাকেই কারামত বা অলৌকিক ঘটনা বলে। কারামত হচ্ছে সংশ্লিষ্ট আওলিয়ায়ে কিরাম উনার মর্যাদা, মর্তবার বহিঃপ্রকাশ। কাফির, মুশরিক, ফাসিক-ফুজ্জারদের দ্বারাও স্বভাববিরোধী বা অলৌকিক ঘটনা প্রকাশ পেতে পারে। আবার অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তানদের দ্বারাও এরূপ ঘটনা প্রকাশ পেতে পারে। তবে তাকে কারামত বলা যাবে না। তাকে বলা হয়, ইস্তিদরাজ বা ভেল্কিবাজি। আর অপ্রাপ্তদের দ্বারা প্রকাশিত অলৌকিক ঘটনাকে আওন বলা হয়।
হযরত আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের কারামত সত্য। এর প্রতি বিশ্বাস করা ফরয। আক্বাঈদের কিতাবে বর্ণিত আছে-
كرامات الاولياء حق
অর্থ : “হযরত আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের কারামত সত্য।” (শরহে আক্বাঈদে নাসাফী) তার সততাকে বিশ্বাস করা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনার অন্যতম আক্বাঈদ বা বিশ্বাস। বাতিল ফিরক্বা মুতাযিলা; তারা কারামত বিশ্বাস করেনা। তাদের মতাদর্শের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেছে জামাতী, ওহাবী, খারিজী, লা-মাযহাবীরাও। তারাও কারামতকে অস্বীকার করে। যা তাদের গোমরাহী বা পথ ভ্রষ্টতারই প্রমাণ।
কারামতকে আমভাবে অস্বীকার করা কুফরী। আর ব্যক্তি বিশেষ কারামতকে অস্বীকার করা কুফরী না হলেও গোমরাহী থেকে খালি নয়। এমনকি ক্ষেত্র বিশেষ কুফরীও হতে পারে।
কারামতকে অস্বীকার করা সংশ্লিষ্ট আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনার প্রতি বিদ্বেষভাবেরই বহিঃপ্রকাশ। আর আওলিয়ায়ে কিরাম উনাদের প্রতি বিদ্বেষভাবাপন্ন হওয়া হালাকী বা ধ্বংসের কারণ। পবিত্র হাদীছে কুদসী শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
من عاد لى وليا فقد اذنته بالحرب
অর্থ : “মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, যে ব্যক্তি আমার ওলী উনার সাথে বিদ্বেষভাবাপন্ন হয়, তার সাথে আমি যুদ্ধের অনুমতি দেই তথা যুদ্ধ ঘোষণা করি।” (বুখারী শরীফ)
কেননা সাইয়্যিদুল আওলিয়া, মাহবূবে সুবহানী, গাউছুল আ’যম হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কারামতকে অস্বীকার করার কারণে কত লোক যে গোমরাহ বা পথভ্রষ্ট হয়েছে তার বর্ণনা দিলে স্বতন্ত্র একটি গ্রন্থ রচিত হবে। সঙ্গতকারণে এখানে তার বর্ণনা দেয়া যাচ্ছে না।
ওলীআল্লাহ হওয়ার জন্য কারামত প্রকাশ পাওয়া শর্ত নয়। তবে প্রত্যেক ওলীআল্লাহ উনার কিছু না কিছু কারামত প্রকাশিত হয়ই। সাইয়্যিদুল আওলিয়া, মাহবুবে সুবহানী হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার অসংখ্য- অগণিত কারামত মুবারক প্রকাশিত হয়েছে। আমরা সংক্ষিপ্তাকারে উনার কিছু কারামত প্রকাশ করবো। ইনশাআল্লাহ।
দার্শনিকের জ্ঞান বিলুপ্তিকরণ
হযরত শায়েখ আবুল মুজাফফর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন, আমি একদিন সাইয়্যিদুল আওলিয়া, মাহবূবে সুবহানী হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মজলিসে হাজির হলাম। আমার হাতে গ্রীক দর্শন ও আত্মা বিষয়ক একটি বই ছিল। মজলিসে উপস্থিত এক ব্যক্তি আমাকে বললো, গাউছে পাক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এ বই সম্পর্কে আপনাকে কিছু বললে আপনি কি বলবেন? কাজেই, সেটা ঘরে রেখে আসেন। তখন আমি সেটা ঘরের এক কিনারে রেখে আসার মনস্থ করলাম, যাতে শায়েখ অসন্তুষ্ট না হন। কিন্তু আমি দর্শন শাস্ত্রের প্রতি এতোই আকৃষ্ট ছিলাম যে, বইটি হাতছাড়া করতে মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না। বইটির অনেক বিষয় আমার মুখস্থ হয়ে গিয়েছিল। তবুও গাউছে পাক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সম্মানার্থে আমি যে মাত্র বইটি রেখে আসতে উঠতে গেলাম, আমি উঠতে পারলাম না। আমার অবস্থা এমন হয়ে গেল যেন আমি হাত-পা আবদ্ধ একজন কয়েদী। তিনি আমাকে বললেন, তোমার বইটি আমাকে দাও। উনাকে হস্তান্তর করার আগে একটু খুলে দেখি, সব কাগজ সাদা হয়ে গেছে। সব বর্ণ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। যাক, আমি বইটি উনাকে দিয়ে দিলাম। তিনি এক এক পৃষ্ঠা উল্টায়ে দেখলেন এবং বললেন- এটাতো মুহম্মদ বিন জরিস লিখিত ‘ফাজায়েলে কুরআন’। আমি আশ্চর্য হয়ে বইটি হাতে নিয়ে দেখলাম, ঠিকই বইটি কুরআনের ফযীলতের উপর খুবই সুন্দরভাবে লিখিত। ইতোপূর্বে আমি দর্শন শাস্ত্রের যে সব বিষয় জ্ঞাত ছিলাম, সব ভুলে গেলাম এবং এমনভাবে ভুলে গেলাম যে আজ পর্যন্ত একটি বিষয়ও আমার স্মৃতিতে আসেনি। সুবহানাল্লাহ!

সাইয়্যিদুল আওলিয়া, মাহবূবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী, গওছুল আ’যম, মুজাদ্দিদুয যামান, ইমামুর রাসিখীন, সুলত্বানুল আরিফীন, মুহিউদ্দীন, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি (২৩)


বিছাল শরীফ

وصال (বিছাল) অর্থ মিলিত হওয়াসাক্ষাত করা। হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা মারা যাননা। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে-
اناولياءاللهلايموتونبلينتقلونمندارالفناءالىدارالبقاء
অর্থ: নিশ্চয়ই আউলিয়ায়ে কিরাম উনারা মৃত্যুবরণ করেননা। বরং উনারা অস্থায়ী আবাস থেকে স্থায়ী আবাসের দিকে ফিরে যান। মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীবনূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ উনাদের সাথে দায়িমী ও হাক্বীক্বী সাক্ষাত মুবারকে মিলিত হন। এজন্য উনাদের ইন্তিকালকে বিছাল শরীফ বা মুবারক বলা হয়। আর হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম উনাদের তাযীম বা সম্মানার্থে শরীফ কিংবা মুবারক শব্দটি সংযুক্ত করা হয়। যেহেতু নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিন ইরশাদ মুবারক করেনমুসলমানরা যতক্ষণ পর্যন্ত সম্মানিত ব্যক্তি বা বিষয়ের যথার্থ সম্মান প্রদর্শন করবে ততক্ষণ পর্যন্ত তারা বিজয় বেশে কামিয়াবী লাভ করবে। আর যখন সম্মান ইজ্জত প্রদর্শন করা থেকে বিরত থাকবে তখন হালাক বা ক্ষতিগ্রস্ত হবে
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
كلنفسذائقةالـموتثماليناترجعون
অর্থ : প্রত্যেক প্রাণীই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। অতঃপর আমার কাছে ফিরে আসবে। (পবিত্র সূরা আনকাবুত: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৭)
আমরা পূর্বেই উল্লেখ করেছি যেএই প্রত্যাবর্তন সকলের জন্য সমান নয়। হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা মহান আল্লাহ পাক উনার বন্ধু। উনাদের বিদায় বা বিছাল শরীফ বিশ্ববাসীর জন্য ইবরত-নছীহতপূর্ণ। যা বিশ্ববাসীর জন্য হিদায়েতের কারণ। গাউছুল আযমসাইয়্যিদুল আওলিয়া হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পবিত্র জীবনী মুবারকে তার যথার্থ প্রতিফলন ঘটেছে। উনার বিলাদত শরীফের দিনটি যেমন বিশ্ববাসীর হিদায়েত তথা সঠিক পথের দিক নির্দেশক ছিল। তেমনি বিছাল শরীফ উনার দিনটিও ছিল বিশ্ববাসীর জন্য হিদায়েতের কারণ
যখন হযরত গাউসুল আযম শায়েখ সাইয়্যিদ মুহীউদ্দিন আবদুল কাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিছাল শরীফ উনার সময় নিকটবর্তী হয়ে গেল তখন উনার ইস্তিঞ্জা মুবারক উনার রাস্তা দিয়ে রক্ত প্রবাহিত হতে লাগল। শুধু তাই নয়ইস্তিঞ্জা থেকে আতর গোলাপের ঘ্রাণ বের হচ্ছিল এবং তার মধ্য থেকে যিকিরও হচ্ছিল (সুবহানাল্লাহ)। ওনার মুরীদ মুতাক্বিদ যাঁরা ছিলেন উনারা বললেনহুযূর! আপনার শরীর অসুস্থ আপনাকে চিকিৎসা করানো দরকার। হযরত গাউসুল আযম শায়েখ সাইয়্যিদ মুহীউদ্দিন আবদুল কাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি প্রথমে বললেনদেখ চিকিৎসা করে কি হবেযিনি সমস্ত চিকিৎসকের চিকিৎসকসমস্ত হাকীমগণের হাকীম সেই মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন আমাকে অসুখ দিয়েছেন। কাজেই আমার এই অসুখ সারা দুরূহ ব্যাপার। আমার হায়াত মুবারক শেষ হয়ে গিয়েছে। আমি থাকতে পারব না এখানে। তথাপিও মুরীদদের আশা উনারা বললেনহুযূর! আপনি যদি অনুমতি দেন তাহলে আমরা চিকিৎসা করি। তিনি চিন্তা করলেন সত্যিই চিকিৎসা করাতো সুন্নতঅসুবিধা নেই ঠিক আছে নিয়ে যাও আমার প্রস্রাব। নিয়ে যাওয়া হলো গাউসুল আযম শায়েখ সাইয়্যিদ মুহীউদ্দিন হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার প্রস্রাব মুবারক একটি পাত্র করে এক বিধর্মী ডাক্তারের কাছে। ইসলাম সম্বন্ধে সেই ডাক্তারের তেমন জানাশোনা নেইহয়তো সামান্য কিছু জানে। যখন গাউসুল আযম শায়েখ সাইয়্যিদ মুহীউদ্দিন হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার প্রস্রাব মুবারক সেই বিধর্মী ডাক্তারের কাছে পেশ করা হলোডাক্তার আশ্চার্য হয়ে মনে মনে চিন্তা করতে লাগল। সে প্রথমে বুঝতেই পারল না এটা প্রস্রাব। ডাক্তার জিজ্ঞেস করল। আপনারা এটা কি নিয়ে এসেছেনএত আতর গোলাপের ঘ্রাণ বের হচ্ছে এবং মনে হচ্ছে তার থেকে মহান আল্লাহ পাক উনার যিকির হচ্ছে। তখন গাউসুল আযম শায়েখ সাইয়্যিদ মুহীউদ্দিন হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুরীদ মুতাক্বিদগণ বললেনডাক্তার সাহেব মূলতঃ এটা হযরত গাউসুল আযম শায়েখ সাইয়্যিদ মুহীউদ্দিন হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার প্রস্রাব মুবারক   শুনে   ডাক্তার  সাহেব  আশ্চর্য  হয়ে  বললচিকিৎসা পরে হবে। তার আগে আমাদেরকে তওবা করান। প্রথমে মুসলমান করান। সেই মহল্লায় ছিল চারশত বিধর্মী লোক। তারা তওবা করে মুসলমান হয়ে গেল। সুবহানাল্লাহ!

ইমামুল মুসলিমীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন, হাকিমুল হাদীছ, ইমামুল আইম্মাহ, মুহ্ইস সুন্নাহ ইমামে আ’যম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-২৫


সমঝ ও বিচক্ষণতা-২

পূর্ব প্রকাশিতের পর
অবশেষে ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট গিয়ে বিস্তারিত ঘটনা খুলে বলল। হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি সবকিছু শুনে বললেন, তোমরা মহল্লার মসিজদের ইমাম, মুয়াজ্জিন এবং দু চার জন গন্যমান্য ব্যক্তিকে আমার নিকট নিয়ে আস। তাদেরকে আনা হলে হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, “তোমরা কি চাওনা যে, এই ব্যক্তির চুরি হয়ে যাওয়া মালামাল সে আবার ফিরে পাক?” তারা বলল অবশ্যই চাই। ইমামে আ’যম রহমতুল্লাইহি আলাইহি বললেন, তাহলে তোমরা ফিরে গিয়ে তোমাদের এলাকায় যত চোর-বদমায়েশ আর সন্দেহজনক ব্যক্তি আছে সকলকে কোন একটা ঘরে বা মসজিদে জমা করো। এরপরে দু একজন দরজায় দাঁড়িয়ে যাও এবং যার মাল চুরি গেছে তাকেও সাথে দাঁড় করাও। অতঃপর একেকজন করে ঘর থেকে বের কর এবং এই লোককে জিজ্ঞেস কর, সে চোর কিনা। যদি চোর না হয় তাহলে বলবে, না এ লোক চোর না। আর যদি চোর হয় তাহলে চুপ থাকবে, কিছুই বলবেনা। আর তোমরা তাকে গ্রেফতার করে তদন্ত করবে। সেই ব্যক্তিই চোর হবে। হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পরামর্শ মত এভাবেই তারা চোর ধরে সব মালামাল উদ্ধার করল অথচ গৃহস্বামীর আহলিয়ার উপর তালাকও পড়ল না। সুবহানাল্লাহ!
ইবনে জাওযী, ইয়াহইয়া ইবনে জাফর রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, এই ঘটনা আমি নিজ কানে হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট শুনেছি। হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, একবার আমি মরুভূমির মধ্যে সফর করছিলাম। রাস্তায় পিপাসা অনুভূত হল এবং পানির ভীষণ প্রয়োজন দেখা দিল। কিন্তু আশে পাশে কোথাও পানি ছিল না। এমন সময় গ্রাম্য এক লোক এক মশক পানি নিয়ে আমার নিকটে এল। আমি তার কাছে পানি চাইলে সে দিতে অস্বীকৃতি জানাল এবং বলল পাঁচ দিরহামের বিনিময়ে দিতে পারি। সুতরাং আমি পাঁচ দিরহাম দিয়ে মশকসহ তার কাছ থেকে পানি কিনে নিলাম। এরপরে আমি সেই বেদুইনকে বললাম জনাব! ছাতুর প্রতি যদি আপনার কোন আগ্রহ থাকে তাহলে আপনাকে দিতে পারি। সে বলল, দিন। আমি ছাতু দিলাম যা যাইতুনের তেলে মাখানো ছিল। সে খুব মজা করে পেট ভরে খেল। খাওয়ার পরেই তার পিপাসা লাগল ভীষন। একেতো ছাতু তার উপরে আবার তেল মাখানো। সে বড় অনুনয়- বিনয় করে আমার কাছে পানি চাইল। আমি বললাম জনাব, পাঁচ দিরহাম হলে এক পেয়ালা দিতে পারি। তার কমে হবে না। সে যেহেতু পানির মুখাপেক্ষি ছিল তাই এই প্রস্তাবেই রাজি হয়ে গেল। আমি এক পেয়ালা পানির বদলে আমার পাঁচ দিরহামও ফেরত পেলাম আবার মশক আর পানিও আমার কাছে রয়ে গেল।
একবার হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সামনে এক জটিল মাসয়ালা পেশ করা হলো। সমসাময়িক সকল হযরত ইমাম-মুজতাহিদীন উনারা সমাধান দিতে অপারগ হয়ে গিয়েছিলেন। পরে উনাকে জিজ্ঞাসা করা হল, “এক মহিলা ছাদে যাওয়ার উদ্দেশ্যে মই বেয়ে উপরে উঠছিল, হঠাৎ করে তার স্বামী তাকে দেখে ফেললো। স্ত্রীর এই কাজ তার খুব অপছন্দ হল তাই সে রাগান্বিত হয়ে বলল, যদি তুমি উপরে উঠ তাহলে তিন তালাক, আবার নিচে নামলেও তিন তালাক। এমতাবস্থায় তালাক থেকে বাঁচার জন্য মহিলা কি পন্থা অবলম্বন করবে? হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, একদম সহজ সমাধান রয়েছে। সেটা হল, মহিলা আর উপরে উঠবেনা এবং নিচেও নামবেনা। যেখানে আছে ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকবে। আর কিছু লোক যেয়ে মইসহ তাকে নামিয়ে এনে মাটিতে রেখে দিবে তাহলে তালাক পড়বে না। আর তার স্বামীর কসমও ভঙ্গ হবে না। লোকেরা জিজ্ঞেস করল, এর অন্য কোন সমাধান আছে কিনা? তিনি বললেন, দ্বিতীয় আরেকটা সমাধান আছে সেটা হল কিছু মেয়ে লোক গিয়ে ঐ মহিলাকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করে তুলে নিয়ে এসে মাটিতে রেখে দিবে। তাহলে তালাক পড়বে না।
একবার লুলুই গোত্রের একটি দল কোন কাজ উপলক্ষে কুফায় আগমন করল। তাদের মধ্যে এক ব্যক্তির আহলিয়া ছিল খুবছূরত। কুফার জনৈক ব্যক্তির দৃষ্টি পড়ল তার উপর। সে কলা কৌশলে তার সাথে ভাব জমিয়ে তাকে নিজের স্ত্রী বলে দাবী করল। মহিলাও নিজের স্বামীকে অস্বীকার করে উক্ত কুফীকে স্বামী বলে পরিচয় দিল। তার আসল স্বামী লুলুই বেচারা পেরেশান হয়ে পড়ল। সে বলছে আমার স্ত্রী আর কুফী বলছে তার স্ত্রী। কিন্তু তার সাথে কোন সাক্ষি না থাকায় কেউ তার কথায় কান দিল না। অবশেষে হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট উক্ত ঘটনা ব্যক্ত করা হলো। তিনি কাজী ইবনে আবী লায়লাসহ আরো কয়েকজন কাজী, ফুকাহা আর মহিলাদের একটি দল নিয়ে উক্ত স্থানে পৌঁছলেন, যেখানে লুলুই গোত্রের লোকেরা তাঁবু ফেলে অবস্থান করছিল। সেখানে পৌঁছে তিনি আগন্তুক মহিলাদেরকে একে একে ঐ তাঁবুতে প্রবেশ করতে বললেন, যেখানে লুলুই ব্যক্তি অবস্থান করছিল। আদেশ অনুযায়ী কুফী মহিলারা যখন ঐ তাঁবুতে প্রবেশ করতে গেল তখন লুলুই ব্যক্তির কুকুর ঘেউ ঘেউ করতে শুরু করল এবং পথ রোধ করে দাঁড়াল। এর পরে হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উক্ত বিতর্কিত মহিলাকে লুলুই ব্যক্তির তাঁবুতে ঢুকতে বললেন। মহিলা তাঁবুর নিকট যাওয়ার সাথে সাথে কুকুরটি লেজ নাড়িয়ে তাকে অভ্যর্থনা জানাতে লাগল এবং একবারও ঘেউ ঘেউ করল না। হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে। এই মহিলা প্রকৃত পক্ষে এই লুলুই ব্যক্তির আহলিয়া। কুকুরটি আগে থেকে তাকে চেনে বিধায় ঘেউ ঘেউ করে নাই। এরপরে মহিলার উপর চাপ প্রয়োগ করলে সেও ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলল ইনিই আমার আসল স্বামী। শয়তানের ধোকায় পড়ে আমি মিথ্যা বলেছিলাম।


ইমামুল মুসলিমীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন, হাকিমুল হাদীছ, ইমামুল আইম্মাহ, মুহ্ইস সুন্নাহ ইমামে আ’যম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-২৯


সমঝ ও বিচক্ষণতা (৬)
 * একদিন অনেক লোক একত্রিত হয়ে ইমামুল মুসলিমীন, ইমামুল মুহাদ্দিসীন ওয়াল ফুক্বাহা সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার খিদমত মুবারকে হাজির হলো। জিজ্ঞাসা করলো, জামায়াতের সাথে নামায আদায়কালে ইমাম সাহেবের সাথে মুক্তাদিকেও সূরা ফাতিহা শরীফ পাঠ করতে হবে কিনা? সাইয়্যিদুনা ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি তাদেরকে বললেন, তোমাদের এতো লোকের সাথে আমি একাকী কথা বলবো কিভাবে? বরং তোমরা একজনকে আমার সাথে কথা বলার জন্য মনোনীত করো। তার সাথে আমার কথোপকথনকেই পুরো জামায়াতের সাথে কথোপকথন বলেই তোমরা স্বীকার করে নাও।
এই প্রস্তাব অনুসারে তারা তাদের একজনকে ইমাম বা নেতা নির্ধারণ করলো। সাইয়্যিদুনা ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি তখন তাদের উদ্দেশ্যে বললেন, এই তো সব প্রশ্নের ফায়সালা হয়ে গেল। তোমরা যেভাবে একজনকে তোমাদের মুখপাত্র ঠিক করলে, সেভাবে জামায়াতের সাথে নামায আদায় করার সময় ইমাম সাহেব সকল মুক্তাদীর মুখপাত্র হয়ে থাকেন। কাজেই, ইমাম সাহেবের ক্বিরাআত পাঠ করাই সকল মুক্তাদির ক্বিরাআত পাঠের মধ্যে গন্য হয়ে থাকে।
আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইহাই বর্ণিত রয়েছে। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
من صلى خلف الامام فقرائة الامام قرائة له
অর্থ: “যে ব্যক্তি ইমাম সাহেবের পিছনে নামায আদায় করে তার জন্য ইমাম সাহেবের ক্বিরাআতই তার ক্বিরাআতের অন্তর্ভুক্ত।”
উল্লেখ্য যে, ইমামুল মুসলিমীন, ইমামুল মুহাদ্দিছীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার অন্যতম অসাধারণ গুণ ছিল যে, তিনি অত্যন্ত জটিল ও কঠিনতম বিষয়কেও অল্প কথায় এবং সুন্দর দৃষ্টান্ত দ্বারা বুঝিয়ে দিতে পারতেন। যা সর্বসাধারণ সবাই সহজেই বুঝতে পারতো। কাজেই, অতি সহজেই তর্ক-বিতর্কও মিটে যেত।
ল হযরত মুহম্মদ ইবনে আব্দুর রহমান যিনি আবী লায়লা নামেই মাশহূর ছিলেন। তিনি ২৩ বছর কুফা শহরের কাজী ছিলেন। ইমামুল মুসলিমীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং উনার মধ্যে সম্পর্ক ভাল ছিল না। কারণ তিনি বিচারকার্যে ভুল করলে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনাকে শুধরিয়ে দিতেন। কাজী সাহেব পবিত্র মসজিদ মুবারকে বসে বিচার কার্য পরিচালনা করতেন।
একদিন তিনি বিচারকার্য শেষ করে রাস্তা দিয়ে চলছিলেন। পথে একজন স্ত্রীলোককে দেখলেন যে, সে অন্য একজন লোকের সাথে ঝগড়া করছে। স্ত্রী লোকটি উক্ত লোকটিকে “ইয়া ইবনে যানিয়াতাইন” অর্থাৎ ওহে দুই ব্যভিচারীর সন্তান বলে গালি দিল।
কাজী সাহেব হুকুম দিয়ে বললেন, স্ত্রী লোকটিকে গ্রেফতার করা হউক। তিনি পুনরায় বিচারের আসনে ফিরে আসলেন এবং হুকুম দিলেন স্ত্রী লোকটিকে দাঁড়ানো অবস্থায় দুটি দোররা মারা হউক।
ইমামুল মুসলিমীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ইহা শুনে বললেন যে, কাজী সাহেব এই বিচারে কতগুলো ভুল করেছেন-
১। বিচার আসন থেকে উঠে গিয়ে পুনারায় ফিরে এসে এজলাস করেছেন। যা আদালতের নিয়মের খিলাফ।
২। পবিত্র মসজিদে শাস্তি দেয়ার হুকুম দিয়েছেন। অথচ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরূপ করতে নিষেধ করেছেন।
৩। স্ত্রীলোককে বসিয়ে শাস্তি দেয়ার নিয়ম। কাজী সাহেব তারও খিলাফ করেছেন।
৪। একটি অপরাধজনক শব্দ উচ্চারণের শাস্তিও একটিই হবে। অথচ উনি দুটি দোররা মারার হুকুম জারী করেছেন।
৫। তাছাড়া দুটি দোররার প্রয়োজন হলেও তা এক সাথে মারা যাবে না। একটি মেরে অপরাধীকে ছেড়ে দিতে হবে। ঘা শুকানোর পর দ্বিতীয়বার মারতে হবে।
৬। সবচেয়ে বড় কথা হলো যাকে গালি দেয়া হয়েছে সে যখন বিচারের দাবী করলো না তখন কাজী সাহেবের বিচার করার ইখতিয়ার থাকলো না।
ইহা শুনে কাজী আবী লায়লা রহমতুল্লাহি আলাইহি অত্যন্ত রাগান্বিত হলেন। কুফার গভর্নরের নিকট অভিযোগ করলেন, “ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আমার কাজে বাধা সৃষ্টি করেছেন।” গভর্নর হুকুম জারি করলেন যে, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি যেন আর কোন ফতওয়া না দেন।

No comments:

Post a Comment