পবিত্র কা’বা শরীফ
থেকে জাগ্রত অবস্থায় স্বশরীর মুবারকে পবিত্র বায়তুল মুকাদ্দাস শরীফ হয়ে নিমিষে মহান আল্লাহ পাক সুবহানাহূ ওয়া তা’য়ালা পর্যন্ত গমন ও দীদার এবং সেখান থেকে নিমিষে পবিত্র কা’বা শরীফে নূরে মুজাসসাম, মাশুকে মাওলা, ছাহিবে মি’রাজ, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রত্যাবর্তনকে আমভাবে পবিত্র মি’রাজ শরীফ নাম মুবারকে অভিহিত করা হয়। পবিত্র মি’রাজ শরীফ দু’ভাগে বিভক্ত: ইসরা ও মি’রাজ। পবিত্র কা’বা শরীফ থেকে পবিত্র বায়তুল মুকাদ্দাস শরীফ পর্যন্ত ইসরা এবং পবিত্র বায়তুল মুকাদ্দাস শরীফ থেকে মহান আল্লাহ পাক সুবহানাহূ ওয়া তা’য়ালা পর্যন্ত যাওয়া ও পবিত্র দীদার উনাকে পবিত্র মি’রাজ শরীফ বলা হয়। এ মর্মে মহান আল্লাহ পাক সুবহানাহূ ওয়া তা’য়ালা তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন: “মহান আল্লাহ পাক তিনি পরম পবিত্র ও মহিমাময়। তিনি আপন প্রিয়তম হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে রাতের অতি স্বল্প সময়ে পরিভ্রমণ করিয়েছেন পবিত্র মসজিদে হারাম শরীফ থেকে পবিত্র মসজিদে আকসা শরীফ পর্যন্ত। যার চারপাশে আমি পর্যাপ্ত বরকত দান করেছি। যাতে আমি আমার প্রিয়তম হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে আমার কুদরত মুবারক উনার নিদর্শনসমূহ দেখিয়ে দিই। নিশ্চয়ই আমি শ্রবণকারী এবং দর্শনকারী।” সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র মি’রাজ শরীফ উনার সামগ্রিক বিষয় আকরামুল আউওয়ালীন ওয়াল আখিরীন, মাশুকে মাওলা, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনন্য মু’জিযা শরীফ এবং মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত মুবারক উনাদের পবিত্র সমন্বয়ে সংঘটিত হওয়ার বিষয়টি মানুষের সহজাত সীমীত উপলব্ধি ও অনুভবের সঙ্গে সামঞ্জস্যশীল নয়। মূলত: পবিত্র মি’রাজ শরীফ মহান আল্লাহ পাক সুবহানাহূ ওয়া তা’য়ালা এবং উনার প্রিয়তম হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মহামিলন ও মু’য়ামিলার এমন এক আনুষ্ঠানিকতার বহিঃপ্রকাশ, যা হাক্বীক্বীভাবে কুল কায়িনাতের অভাবনীয় ও অবোধ্য।
প্রেক্ষিত কারণে পবিত্র মি’রাজ শরীফ উনার হাক্বীক্বী উপলব্ধির ক্ষেত্রে মানুষ বিভিন্ন কষ্ট-কল্পনা ও ধ্যান-ধারণার আশ্রয় নিয়ে থাকে। সেসবের মধ্যে সূতিকাগারে ঘুরপাক খাওয়া বিজ্ঞানকেই মানুষ সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ অবলম্বন হিসেবে মনে করে থাকে। বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় যারা পবিত্র মি’রাজ শরীফ, পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ এবং সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উপলব্ধি করতে চায়, তারা অবোধ ও মূর্খ। অনুধাবণ ও ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে সম্মানিত ইসলাম ও বিজ্ঞান যখন সাংঘর্ষিক হয়, নাদান ও গ- মূর্খরা তখন বিজ্ঞানকেই প্রাধান্য দিতে চায়। নাউযুবিল্লাহ! মুসলমান উনাদের মধ্যে যাদের ঈমান ও আক্বীদা বিশুদ্ধ নয়, তারাও ওই বাতিল পন্থীদেরই দলভুক্ত। নাউযূবিল্লাহ! বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণে পবিত্র মি’রাজ শরীফ, বিশেষ করে, পবিত্র দিদার বিরোধী অনেক বই-পুস্তক বেরিয়েছে। পবিত্র মি’রাজ শরীফ উনার বিরুদ্ধাচারণ করা, ভুল ব্যাখ্য দেয়া তথাকথিত বিজ্ঞান মনষ্ক একটি বোদ্ধা মহল এবং উলামায়ে ‘সূ’দের ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। নাউযুবিল্লাহ!
বিস্তারিত এই লিঙ্কে https://asaduzzaman347.blogspot.com
আইনষ্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব মিলিয়ে অনেকে পবিত্র মি’রাজ শরীফ সম্পর্কে আজগুবি ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ দাঁড় করিয়ে থাকে। আইনষ্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্বমতে আলোর গতির চেয়ে অধিক কোনো গতি নেই। পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব হলো ১৫ কোটি কিলোমিটার। আর আলোর গতিবেগ হলো প্রতি সেকেন্ডে ৩ লক্ষ কিলোমিটার। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মর্মানুযায়ী সম্মানিত বোরাক এক সেকেন্ডের বহু পূর্বেই ১৫ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে ফেলেছেন। আলোর গতি অনুযায়ী চললে সূর্যের দূরত্ব পরিমাণ পথ অতিক্রমণে সম্মানিত বোরাক উনার প্রয়োজন হতো কমপক্ষে ৮ মিনিট, যা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সম্মানিত বোরাক উনার গতির সঙ্গে আলোর গতির তুলনা করতে যাওয়া গুমরাহী ছাড়া আর কিছু নয়। তাই পবিত্র মি’রাজ শরীফ উনার ব্যাখ্যায় আইষ্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব অচল।
পবিত্র মি’রাজ শরীফে ছাহিবুল ওহী ওয়াল কুরআন, রহমতুল্লিল আলামীন, রউফুর রহীম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক সুবহানাহূ ওয়া তায়ালা উনার সঙ্গে পবিত্র দিদার ও আলাপন এবং পবিত্র ওহী মুবারক লাভ শেষে যমীনে প্রত্যাবর্তনের পর দেখা যায়, যে বিছানা মুবারকে তিনি শায়িত থেকে পবিত্র মি’রাজ শরীফে গমন করেছিলেন, তা গরম রয়েছে, পবিত্র অযূ মুবারক উনার পানি গড়িয়ে যাওয়া শেষ হয়নি এবং দরজা মুবারক উনার শিকল নড়ছে। সুবহানাল্লাহ!
বিজ্ঞানের ফরমুলায় এক শ্রেণির নাদান পবিত্র মি’রাজ শরীফ বুঝতে চায়। মধ্যাকর্ষণ শক্তি অতিক্রমণের বিষয় সমাধান করতে চায়। নাউযূবিল্লাহ! তারা বলে এবং বিশ্বাস করে, পবিত্র মি’রাজ শরীফ অনুষ্ঠানকালে সময়কে আটকে রাখা হয়েছে। যে কারণে পবিত্র মি’রাজ শরীফ অনুষ্ঠানে দীর্ঘ ২৭ বছর অতিক্রান্ত হলেও পবিত্র বিছানা মুবারক গরম থেকেছে। পবিত্র অযূর পানি মুবারক গড়িয়ে যেতে থেকেছে। দরজা মুবারকের শিকল মুবারক নড়তে থেকেছে। সময় আটকে রাখার কারণে দীর্ঘ ২৭ বছর পার হলেও মুবারক এ বিষয়গুলোর স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ হতে পারেনি। নাউযূবিল্লাহ!
পবিত্র মি’রাজ শরীফ অনুষ্ঠানকালে সময়ের চলমানতা আটকে রাখার বিষয়টি বাতিলপন্থীদের উদ্ভাবন। আসলে সময়তো মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই নিয়ন্ত্রণ করেন। উনার কায়িম মাক্বাম হিসেবে সময়তো স্বয়ং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিই সময়ের নিয়ন্ত্রক ও পরিচালক। দীর্ঘ ২৭ বছর এমনভাবে অতিক্রান্ত হয়েছে, যেখানে কুদরতীভাবে সময়ের গতিময়তার কোনো ক্ষেত্রই সৃষ্টি হতে পারেনি। যেমন মহান আল্লাহ পাক সুবহানাহূ ওয়া তায়ালা উনার কাছে অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত একাকার। অর্থাৎ সবই বর্তমান। অথচ সময়ের গতিময়তা কখনো থেমে নেই। নিগূঢ় এ বিষয়টি উপলব্ধির জন্য যে সমঝ ও যোগ্যতা প্রয়োজন, তা বিজ্ঞানমনস্ক নাদান ও জাহিলদের নেই।
পবিত্র মি’রাজ শরীফ অস্বীকার ও অবিশ্বাসকারী নাস্তিক, গুমরাহ ও কাফিররা পবিত্র মি’রাজ শরীফ উনার সত্যতা, পবিত্র দিদার এবং আনুষঙ্গিক মুবারক বিষয়গুলোতে অধুনা যে সব প্রশ্ন উত্থাপন করে, ১৪শ’ বছর আগে পবিত্র মক্কা শরীফের কাফির, মুশরিক, ইহুদী ও পৌত্তলিকরাও একই প্রকার প্রশ্ন উত্থাপন করেছে, কূট তর্কে লিপ্ত থেকেছে। তাদেরই অধস্তন সন্তান হলো পবিত্র মি’রাজ শরীফ অবিশ্বাসকারী বর্তমানকালের তথাকথিত প্রগতিবাদী গোষ্ঠী। এদের কথা ও বোধ-বিশ্বাসের প্রেক্ষিতে বলতে হয়, আপন প্রিয়তম হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে আনুষ্ঠানিকভাবে পবিত্র দিদারদানের লক্ষ্যে মুবারক সন্নিধানে নেয়ার জন্য মহান আল্লাহ পাক সুবহানাহূ ওয়া তায়ালা উনার ক্ষমতা ও কুদরত কোনটিই ছিলো না এবং বর্তমানেও নেই। নাউযুবিল্লাহ!
মধ্যাকর্ষণ শক্তির বাধা এবং মহাকাশের বিভিন্ন প্রতিকূল অবস্থা ভেদ করে কিভাবে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র মি’রাজ শরীফ সম্পাদিত হলো এবং অক্সিজেন ছাড়া তিনি কিভাবে মহাকাশে বেঁচে রইলেন, তা নিয়ে বাতিলপন্থীরা অত্যন্ত চিন্তাযুক্ত। মহান আল্লাহ পাক সুবহানাহূ ওয়া তায়ালা উনার কুদরত মুবারক, উনার প্রিয়তম হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মু’জিযা শরীফ, পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ এবং পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের অকাট্য দলীল প্রমাণের ভিত্তিতে বিশ্বাস না করে বিজ্ঞানের ফরমুলায় মনগড়াভাবে উলামায়ে সূ’, গুমরাহ গোষ্ঠী ও বাতিলপন্থীরা পবিত্র মি’রাজ শরীফ, সিনা মুবারক চাক উনাদের হাক্বীক্বত বুঝতে চায়। নাউযুবিল্লাহ!
পৃথিবীর মধ্যাকর্ষণ শক্তি আছে। সে শক্তি শূন্য মন্ডলের যে কোনো স্থূল বস্তুকে নিচের দিকে টেনে আনে। ফলে শারীরিকভাবে মহাকাশ ভ্রমণ সম্ভব নয় মর্মে কাফির মুশরিকরা যে যুক্তি প্রদর্শন করে, সে যুক্তি আজকের বিজ্ঞান প্রত্যাখ্যান করে। শূন্যে অবস্থিত যে কোনো স্থূল বস্তুকেই পৃথিবী একইভাবে আকর্ষণ করতে পারে না। পৃথিবীর কোনো বস্তু যখন “নিউট্রাল জোন”-এ পৌঁছে যায়, তখন সে বস্তুর পৃথিবীতে ফিরে আসার সম্ভাবনা তেমন থাকে না। বিজ্ঞান বলে, কোনো বস্তু যদি প্রতি সেকেন্ডে মোটামুটি সাড়ে ৭ মাইল বেগে উপরের দিকে ছুটে চলে, তবে সে বস্তু পৃথিবীতে আর ফিরে আসে না। পৃথিবী হতে কোনো বস্তু যতোই উর্ধ্বলোকে যেতে থাকে, ততোই তার ওজন কমতে থাকে। এজন্য উর্ধ্বপানে সে বস্তুর গতি ক্রমান্বয়ে সহজতর হতে থাকে। ঘন্টায় ২৫ হাজার মাইল এর বেশী গতিতে উর্ধ্বলোকে অগ্রসর হতে পারলে পৃথিবীর আকর্ষণ থেকে মুক্তিলাভ করা যায়। বিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছে “মুক্তি গতি”।
এসব কারণে আধুনিক বিজ্ঞান পবিত্র মি’রাজ শরীফ উনার সম্ভাবনাকে একেবারে উড়িয়ে দিতে চায়না। পবিত্র মি’রাজ শরীফ বিশ্বাসের ক্ষেত্রে আমরা এসব বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার উপর আদৌ নির্ভর করিনা। জটিল ও সূক্ষ্ম বিষয় উপলব্ধির জন্য সব সময় ‘বিজ্ঞান’-‘বিজ্ঞান’ বলে যারা চেঁচামেচি করে, তাদের মনোরঞ্জনের জন্যই আলোচ্য উদাহরণগুলোর অবতারণা।
জড় জগতের গ্রহ উপগ্রহগুলোইতো মানুষ আবিষ্কার করতে পারেনি। পবিত্র মি’রাজ শরীফ উনার হাক্বীক্বত বুঝবে কী করে? তাহতাচ্ছারা থেকে পবিত্র আরশ মুয়াল্লাহ পর্যন্ত আলমে খালক্ব। পবিত্র আরশ থেকে পবিত্র আলমে আমর শুরু। উভয় জগতই নূরে মুজাসসাম, মাশুকে মাওলা হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এক কাতরা নূর মুবারক দ্বারা সৃষ্টি। উভয় জগতেই উনার অবাধ বিচরণ। আরশ, কুরসী, লাওহ, কলম, জান্নাত, জাহান্নাম, এমনকি পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফসহ ইহকাল ও পরকালের সমুদয় বিষয় আকরামুল কারাম, রসূলুল মালিকিল আ’লাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সীমাহীন ইলম উনার সামান্য অংশ মাত্র। সুবহানাল্লাহ!
ছাহিবুল ওহী, ছাহিবুল কাওছার, ছাহিবুল ওয়াসীলাহ, মাশুকে মাওলা, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন: “মহান আল্লাহ পাক উনার সঙ্গে আমার এমন নিগূঢ় নৈকট্য, যেখানে কোনো নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম, কোনো ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম অথবা অন্য কারো স্থান সংকুলান হয় না।” সুবহানাল্লাহ! সৃষ্টিলগ্ন থেকেই তিনি দায়িমী ছোহবত ও পবিত্র দিদার মুবারকে মাশগুল রয়েছেন। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে যে, তিনি অনুক্ষণ মহান আল্লাহ পাক সুবহানাহু ওয়া তায়ালা উনার কুদরত মুবারকের মধ্যে রয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!
সার্বক্ষণিক নিগূঢ় নৈকট্য, ছোহবত, দিদার ও আলাপন উনাদের মুবারক বিষয়টি মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র মি’রাজ শরীফে উনার আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে কুল কায়িনাতকে জানিয়ে দিলেন। জানিয়ে দিলেন পবিত্র মি’রাজ শরীফ, সিনা মুবারক চাক, দিদার, আলাপন কেবলই মাশুকে মাওলা, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য শোভনীয় ও সহনীয়। অন্য কারো জন্যই নয়। জানিয়ে দিলেন, তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার মা’শুক। তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বায়িম মাক্বাম। জানিয়ে দিলেন মহান আল্লাহ পাক উনার পরেই উনার প্রিয়তম হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক অধিষ্ঠান। সুবহানাল্লাহ!
আধুনিক বিজ্ঞানের সূচনা হয়েছে ১০০ বছর আগে। আর ইলম, হিকমত, প্রজ্ঞা, মুহব্বত-মারিফাত, তায়াল্লুক-নিসবত উনাদের সূচনা হয়েছে- আবূল বাশার মুহম্মদ ছফিউল্লাহ হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার মুবারক সময় থেকে। ছাহিবে শাফায়াতে কুবরা, ছাহিবে মাক্বামে মাহমুদ, ছাহিবে ঈমান, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র আঙ্গুল মুবারক উনার ইশারায় চন্দ্র দ্বিখন্ডিত হওয়া, উনার পবিত্র সিনা মুবারক চাক সম্পর্কে কোনো ব্যাখ্যা কী আধুনিক বিজ্ঞান দিতে পারে? কস্মিনকালেও নয়। পবিত্র মি’রাজ শরীফ, পবিত্র সিনা মুবারক চাক-পবিত্র এ বিষয়গুলো নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, মাশুকে মাওলা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনন্য মু’জিযা শরীফ। এই মুজিযা শরীফ উনার কোনো ব্যাখ্যাই বিজ্ঞানে নেই।
পবিত্র মি’রাজ শরীফ শুধুই আনুষ্ঠানিকতা। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহানতম শান সমূহের একখানি মুবারক শান উনার বহি:প্রকাশ। পবিত্র দিদার, পবিত্র ছোহবত দুনিয়ার যমীনেও দান করা সম্ভব এবং তা সার্বক্ষণিকভাবে করাও হয়েছে। মূল বিষয়টি সমঝদার উনাদের জানা আবশ্যক। তা হলো, উহুদ ও তায়িফ-এর ঘটনার সঙ্গে পবিত্র মি’রাজ শরীফ উনার কোনোই পার্থক্য নেই। কারণ নুবুওওয়াত ও রিসালত, মান-শান, মর্যাদা-মাক্বাম উনাদের কখনোই কোনো রূপান্তর ঘটেনি। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, মাশুকে মাওলা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন: “আমি মহান আল্লাহ পাক উনার সঙ্গে রাত যাপন করি। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে খাওয়ান এবং তিনি আমাকে পান করান।” সুবহানাল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক সুবহানাহূ ওয়া তা’য়ালা তিনি পবিত্র কালাম পাক উনার মধ্য ইরশাদ মুবারক করেন যে, পবিত্র মি’রাজ শরীফ সংঘটিত হয়েছে মানুষকে পরীক্ষা করার জন্য। বিশুদ্ধ আক্বীদায় মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত মুবারক, মহান আল্লাহ পাক উনার সঙ্গে নূরে মুজাসসাম, মাশুকে মাওলা, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিগূঢ় সম্পর্ক এবং উনার সীমাহীন শান-মান, মর্যাদা-মাক্বাম সম্পর্কে বিশুদ্ধ আক্বীদায় কে বিশ্বাস করে, আর কে বিশ্বাস করেনা, তা যাচাই করার জন্য। পবিত্র মি’রাজ শরীফ যারা অস্বীকার ও অবিশ্বাস করে, তারা নামায অস্বীকার করে। নাউযূবিল্লাহ! কাজেই তারা কাফির। পবিত্র মি’রাজ শরীফ উনার মূল তোহফাইতো পবিত্র নামায। সুবহানাল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক সুবহানাহূ ওয়া তা’য়ালা উনার কুদরত মুবারক এবং হযরত নবী রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের, বিশেষ করে ছাহিবু লিওয়ায়িল হামদ, ছাহিবু কা’বা কাউসাইন, ছাহিবুল মি’রাজ, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র মু’জিযা শরীফ উনার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ বিজ্ঞানের সাধ্যাতীত। বিজ্ঞান শুধু এতোটুকু বলতে পারে যে, “বিষয়টি শুধুই মহান আল্লাহ পাক উনার ক্ষমতা ও ইখতিয়ারভুক্ত।” ফিরাউনের মোতায়েনকৃত যাদুকরদের মুকাবিলায় হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র লাঠি মুবারক উনার সাপে পরিণত হওয়া, যাদুকরদের সকল সাপ গিলে ফেলা, রশিতে রূপান্তর হওয়া এবং লাঠি মুবারকে আলো জ্বলে উঠার মু’জিযা শরীফ উনার কোনো ব্যাখ্যাই বিজ্ঞানে নেই।
ছাহিবে লাওলাক, নূরে মুজাসসাম, ছাহিবু কা’বা কাউসাইনী আও আদনা, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান-মান, মর্যাদা-মাক্বাম, ফাযায়িল-ফযীলত সীমাহীন। আবাদুল আবাদ পর্যন্ত কুলকায়িনাতের দায়িমী ছানা-ছিফত কস্মিনকালেও উনার সীমাহীন মর্যাদা ও মাক্বাম, ফাযায়িল-ফযীলত উনাদের সমান্তরাল হবে না, অর্থাৎ সমান হবে না। তাই মহান আল্লাহ পাক সুবহানাহূ ওয়া তা’য়ালা তিনি এ অসনীয় শূন্যতা পূরণের জন্য সর্বক্ষণ উনার মাশুক, উনার প্রিয়তম হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র ছালাত পাঠে, অর্থাৎ উনার পবিত্র ছানা-ছিফত মুবারকে মশগুল রয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র মি’রাজ শরীফ উনার হাক্বীক্বী ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ বিজ্ঞানে নেই। এটিই হলো আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনার ছহীহ আক্বীদা। যারা এই আক্বীদায় বিশ্বাসী নয়, অর্থাৎ যারা বিজ্ঞান মনষ্ক বোধ-বিশ্বাসে পবিত্র মি’রাজ শরীফ অবিশ্বাস ও অস্বীকার করে, তারা কাট্টা কাফির। পবিত্র মি’রাজ শরীফ উপলব্ধির জন্য অনিবার্য সমঝ, মন, মনন, ছহীহ আক্বীদার উৎসমূল হলেন পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা ও ক্বিয়াস শরীফ। কখনোই বিজ্ঞান নয়। আর এসব নিয়ামত হাছিলের উন্মেষ ঘটে পঞ্চদশ হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে মাদারজাদ, সাইয়্যিদে মুজাদ্দিদে আ’যম, আওলাদে রসূল, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা কা’বা আলাইহিস সালাম, রাজারবাগ শরীফ, ঢাকা- উনার মুবারক সান্নিধ্যে। সুবহানাল্লাহ!
http://stratoplot.com/1WFg
No comments:
Post a Comment