প্রায় ১০ থেকে ১৫ দিন ধরে বৃদ্ধ লোকটি রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছিলো। শরীরে তেমন বল ছিল না। অনেকটা কষ্ট করেই এই পাড়া থেকে ওই পাড়া, রাস্তা থেকে রাস্তায় ঘুরছিলো বৃদ্ধ’। কিন্তু কেউ জানে না লোকটি কে? কি তার পরিচয়? কারো মায়া হলে কিছু খাবার কিনে দিচ্ছে, কেউবা দুই-চার টাকা সাহায্য করছে। কিন্তু লোকটির পরিচয় বা তার বিষয়ে কেউ খোঁজ নিয়ে তার ঠিকানায় পৌঁছে দেয়ার চিন্তা মাথায় নেয়নি। এভাবে খেয়ে না খেয়েই কাটছিল তার জীবনের শেষ ৬টি দিন। অবশেষে বড় উঠান এলাকার একটি কমিউনিটি সেন্টারের পাশ থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। অজ্ঞাত পরিচয়েই দাফন করা হয় স্থানীয় কবরস্থানে। ঘটনাটি ঘটেছে চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলায়।’
শুধু চট্টগ্রামেই নয় সারাদেশেই এরূপ অনাহারী পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সরকার থেকে আরোপিত অঘোষিত লকডাউনে ছিন্নমুল মানুষেরা এভাবে না খেতে পেরে ক্ষুধার জ্বালা সহ্যৃ করছে। ফলে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। পাশাপাশি কঠিন সময়ের মুখোমুখি হতদরিদ্র ও দিনমজুরা। জীবিকা নিয়ে বড় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা। দিনে এনে দিনে খাওয়া শ্রমজীবী যেমন- মজুর, রিকশাওয়ালা, অটোরিকশা-টেম্পো চালক-হেলপার, সবজি-ফল ও চা-পান বিক্রেতা এবং কুলিসহ নিম্ন আয়ের লক্ষ লক্ষ মানুষ চোখে সর্ষে ফুল দেখছেন। কর্মহারা গৃহকর্মী ও দৈনিক আয়ের ভিত্তিতে নানা ধরনের কাজ করে যারা বস্তিতে বসবাস করেন তারাও পরিবারের খাবার যোগান নিয়ে দিশেহারা পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে গেছেন। বিচ্ছিন্ন সময়কালে প্রতিদিনের খাদ্য, ওষুধ ও পরিচ্ছন্নতাসামগ্রী কেনার অর্থের উৎস হারিয়ে চোখে অন্ধকার দেখছেন সমাজের এই দরিদ্র শ্রেণির মানুষ।
তবে বেশি বিপদে রয়েছেন দিন এনে দিন খাওয়া শ্রমজীবী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। দৈনন্দিন রোজগার করতে না পেরে থমকে গেছে তাদের অভাবের জীবনযাপনও। কর্মহীন এ মানুষগুলো ক্ষুধার ত্রাণ পেতে ছুটছেন পথে পথে। কোথাও দুমুঠো খাবার জুটলেই চোখে মুখে যেন ফুটে উঠছে রাজ্য জয়ের প্রশান্তি। তাদের পাশাপাশি নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষও রয়েছেন ভীষণ কষ্টে। তারা লজ্জায় দিনের বেলা খাবারের সন্ধানে বের হতে পারেন না। কিন্তু সন্ধ্যা নেমে আসতেই বের হন। খুঁজতে থাকেন ত্রাণের গাড়ি। কান খাড়া করে থাকেন কোথাও ত্রাণ দেয়া হচ্ছে কিনা সেই খবর পেতে। গত কয়েকদিন রাজধানীর বিভিন্ন স্থান ঘুরে কর্মহীন এসব মানুষের বেঁচে থাকার এমন যুদ্ধ দেখা গেছে। এরই মধ্যে গতপরশু লকডাউন পরিস্থিতিতে খাবার না পেয়ে ক্ষুধার জ্বালায় রাস্তার পাশে মারা যায়। পরবর্তীতে স্থানীয়রা সহযোগীতা করে তাকে দাফন করে।
উল্লেখ্য, সারাদেশে অঘোষিত লকডাউনে এমনই অসহায় অবস্থা দরিদ্র অসহায় মানুষেরা। যেখানে সরকার মহল দেশের উন্নয়নের সাফল্যগাঁধা প্রচার করতে করতে মুখে ফেনা তুলে ফেলছে সেখানে মানুষ না খেয়ে মারা যাচ্ছে। অন্যদিকে, নি¤œ আয়ের পেশাজীবিরা কর্মহীন হয়ে পরিবার নিয়ে অনাহারী থাকছে। খাদ্যের সঙ্কটে রাস্তায় নামছে। পাড়া-মহল্লাতেই নয়, প্রধান প্রধান সড়কের পাশেও এই অভাবী মানুষের ভিড় বাড়ছে। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় এমন অসংখ্য মানুষকে দেখা গেছে। গাড়ি দেখলেই তারা হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। ধনীদের বাসা-বাড়ির সামনে গিয়ে জড়ো হয়ে আছে, এমন দৃশ্যও চোখে পড়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার কয়েকটি বাড়ির সামনে এমন ভিড় লক্ষ করা গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই মানুষগুলো সাহায্যের জন্য ওইসব বাড়ির সামনে জড়ো হয়েছেন।
শুধু যে শহরগুলোতেই এ অবস্থা তা নয়। গ্রামেও একই পরিস্থিতি শুরু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দিন যত যাবে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হয়ে উঠবে। কাজ না থাকলে মানুষের উপার্জন থাকবে না। মানুষ খাবে কী? এক্ষুণি ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে।
রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা গেছে হাহাকারের মতো পরিস্থিতি। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়, আজিমপুর, ঝিগাতলা, ধানমন্ডি-২৭, হাইকোর্ট মাজার, কমলাপুর, গুলিস্তান, হাতিরঝিল, বিমানবন্দর, মিরপুর-১০সহ বিভিন্ন স্থানে ত্রাণপ্রত্যাশী মানুষের ভিড় প্রতিদিনই চোখে পড়ার মতো। কোথাও কোথাও ত্রাণের চেয়ে মানুষের সংখ্যা ছিল অনেক বেশি। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী জানান, ত্রাণের জন্য হাহাকার চলছে। অনেক মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষও গভীর রাতে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকছেন। তারা লজ্জায় কারও কাছে কিছু চাইতে পারেন না। ত্রাণ বিলি করতে করতে এক সময় তো শেষ হয়ে যায়। কিন্তু অভাবী মানুষের লাইন ফুরায় না। প্রতিদিনই অনেক মানুষ অভুক্ত থেকে যাচ্ছেন। তাদের খালি হাতেই ফিরতে হচ্ছে, নিজের কাছে, নিজের পরিবারের কাছে।
কারওয়ান বাজারে রেললাইনের ধারে পাথরের ওপর শুয়ে থাকে বহু ছিন্নমুল মানুষ। নদীভাঙনের শিকার এসব মানুষ ঠাঁই নিয়েছিলেন এখানকার বস্তিতে। তাদের কেউ ঠেলাগাড়ি বা ভ্যান চালাতো, কেউ সবজি বিক্রি করতো। বস্তি উচ্ছেদের পর খোলা আকাশের নিচেই বসবাস। তাদের বেশিরভাগই রংপুর, সিরাজগঞ্জ থেকে এসেছেন। রাজধানীতে লোক চলাচল ও ব্যবসা-বাণিজ্য কমেছে। কোনো কাজ না পাওয়ায় বসে বসে সময় কাটাচ্ছেন তারা। রোজগার না থাকায় জুটছে না খাবারও। বয়স্করা ক্ষুধা সইতে পারলেও শিশুরা পারছে না। খিদের চোটে কান্না করছে তারা। এতে অস্থির হয়ে পড়ছেন বড়রা। কিন্তু তাদের যেন কিছুই করার নেই। নি¤œ আয়ের এক সবজি বিক্রেতা বলেন, ‘সকাল থেকে বসে আছি। বেচাকেনা নেই। না বেচতে পারলে খামু কী? আগে তো বেচাকেনা ভালোই হতো। এখন আর হয় না। আর সইতে পারছি না। কত বেলা না খেয়ে থাকা যায়?’
অভিজ্ঞমহল মনে করছেন করোনা নিয়ে সরকার যা করছে তা সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক। কারণ সংবিধানের ২(ক) অনুচ্ছেদে বর্ণিত আছে, রাষ্ট্রদ্বীন পবিত্র দ্বীন ইসলাম। কাজেই পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার আলোকেই সমস্যার সমাধান করতে হবে।
No comments:
Post a Comment