মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি সম্মানিত দুরূদ শরীফ পাঠ করা ব্যতীত নামায কবূল হয় না

Related image

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে- 
عَنْ حَضْرَتْ اَبِـىْ مَسْعُوْدِ ۣ الْاَنْصَارِىِّ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ صَلّٰى صَلٰوةً لَّـمْ يُصَلِّ فِيْهَا عَلَىَّ وَلَا عَلـٰى اَهْلِ بَيْـتِـىْ لَـمْ تُقْبَلْ مِنْهُ.
অর্থ: “হযরত আবূ মাস‘ঊদ আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি নামায পড়বে, কিন্তু নামাযে আমার এবং  আমার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি সম্মানিত দুরূদ শরীফ পাঠ করবে না, তার নামায কবূল হবে না।” (সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ১১/৯, সুনানুদ দারাকুত্বনী ২/১৭১, শরহু সুনানি আবী দাঈদ লিল ‘আইনী ৪/২৬৬, আল বাদরুল মুনীর ৪/১৫, নাছবুর রাইয়াহ ১/৪২৭, আদ দিরায়াহ ১/১৫৮, আল ‘ইলাল ৬/১৯৭, আন নাজমুল ওহহাজ ২/১৬৪)
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে, 
عَنْ حَضْرَتْ اَبِـىْ مَسعُودٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ لَوْ صَلَّيْتَ صَلٰوةً لَّـمْ يُصَلَّ فِيْهَا عَنِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلَا عَلـٰى اَهْلِ بَيْتِهٖ لَرَاَيْتَ اَنَّهَا لَا تَتِمُّ مَوْقُوْفًا.
অর্থ: “হযরত আবূ মাস‘ঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তুমি যদি কোন নামায আদায় কর, কিন্তু ওই নামাযে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি দুরূদ শরীফ পাঠ না করো। তাহলে তুমি অবশ্যই দেখবে যে, সেই নামায পূর্ণ হয়নি; বরং ঝুলন্ত।” (দারাকুত্বনী ৬/১৯৮)
আরো বর্ণিত হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِـىْ جَعْفَرٍ مُحَمَّدِ بْنِ عَلِـىِّ بْنِ الْـحُسَيْنِ عَلَيْهِمُ السَّلَامُ اَنَّهٗ قَالَ لَوْ صَلَّيْتُ صَلٰوةً لَّـمْ اُصَلِّ فِـيْهَا عَلَى النَّبِـىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلَا عَلـٰى اَهْلِ بَيْتِهٖ لَرَاَيْتُ اَنَّهَا لَا تَتِمُّ.
অর্থ: “হযরত আবূ জা’ফর মুহম্মদ ইবনে আলী ইবনে হুসাইন আলাইহিমুস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি যদি কোন নামায আদায় করি, কিন্তু ওই নামাযে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি সম্মানিত দুরূদ শরীফ পাঠ না করি। অবশ্যই আমি দেখি যে, নিশ্চয়ই উক্ত নামায পূর্ণ হয়নি।” সুবহানাল্লাহ! (শিফা শরীফ ২/৬৪, শরহুশ শিফা ২/১১২, তাফসীরে কুরতুবী শরীফ ১৪/২৩৬, দারাকুত্বনী ইত্যাদি)
কাজেই  মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি সম্মানিত ছলাত তথা দুরূদ শরীফ পাঠ না করলে, নামায কবুল হয় না। আর এই কারণেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদেরকে উনার এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি কিভাবে সম্মানিত ছলাত বা দুরূদ শরীফ পাঠ করতে হবে, সেই বিষয়টি তা’লীম বা শিক্ষা মুবারক দিয়েছেন। যেমন, এই সম্পর্কে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ عَبْدِ الرَّحْمٰنِ بْنِ اَبِـىْ لَيْلٰى رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ قَالَ لَقِيَـنِـىْ حَضْرَتْ كَعْبُ بْنُ عُجْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ فَقَالَ اَلَا اُهْدِىْ لَكَ هَدِيَّةً سَـمِعْتُهَا مِنَ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقُلْتُ بَلٰى فَاَهْدِهَا لِـىْ فَقَالَ سَاَلْنَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقُلْنَا يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَيْفَ الصَّلٰوةُ عَلَيْكُمْ اَهْلَ الْبَيْتِ فَاِنَّ اللهَ قَدْ عَلَّمَنَا كَيْفَ نُسَلِّـمُ عَلَيْكُم قَالَ قُوْلُوْا اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلـٰى مُحَمَّدٍ وَّعَلـٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلـٰى اِبْرَاهِيْمَ وَعَلـٰى اٰلِ اِبْرَاهِيْمَ اِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّـجِيْدٌ اَللّٰهُمَّ بَارِكْ عَلـٰى مُحَمَّدٍ وَّعَلـٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلـٰى اِبْرَاهِيْمَ وَعَلـٰى اٰلِ اِبْرَاهِيْمَ اِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّـجِيْدٌ.
অর্থ: “হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আবূ লাইলা (তাবেয়ী) রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হযরত কা’ব ইবনে উজরা রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার সাথে একদা আমার সাক্ষাৎ হলো। তিনি বললেন, (হে আব্দুর রহমান!) আমি কি আপনাকে একটি কথা হাদিয়া দিবো না, যা আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছ থেকে শুনেছি? আমি বললাম, হাঁ, আমাকে তা হাদিয়া করুন। তখন তিনি বললেন, একবার আমরা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সুওয়াল করেছিলাম। আমরা বলেছিলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার এবং আপনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের অর্থাৎ আপনাদের প্রতি কিভাবে সালাম পাঠ করবো তা মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন। দয়া করে বলুন, আপনার প্রতি এবং আপনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি আমরা কিভাবে সম্মানিত ‘ছলাত’ (দুরূদ শরীফ) পাঠ করবো? 
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আপনারা এইভাবে বলবেন,
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلـٰى مُحَمَّدٍ وَّعَلـٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلـٰى اِبْرَاهِيْمَ وَعَلـٰى اٰلِ اِبْرَاهِيْمَ اِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّـجِيْدٌ اَللّٰهُمَّ بَارِكْ عَلـٰى مُحَمَّدٍ وَّعَلـٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلـٰى اِبْرَاهِيْمَ وَعَلـٰى اٰلِ اِبْرَاهِيْمَ اِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّـجِيْدٌ.
“হে মহান আল্লাহ পাক! আপনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি সম্মানিত ছলাত মুবারক পেশ করুন, যেভাবে আপনি ছলাত পেশ করেছেন সাইয়্যিদুনা হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার এবং উনার হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত এবং সম্মানিত। সুবহানাল্লাহ! হে মহান আল্লাহ পাক! আপনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি সম্মানিত বরকত নাযিল করুন, যেভাবে আপনি বরকত নাযিল করেছেন সাইয়্যিদুনা হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার এবং উনার হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত এবং সম্মানিত।” সুবহানাল্লাহ! (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মেশকাত শরীফ)
এই সম্মানিত দুরূদ শরীফ প্রতি ওয়াক্তে প্রত্যেক নামাযেই পাঠ করা হয়। সুবহানাল্লাহ! যারা নামাযে উপরোক্ত সম্মানিত দুরূদ শরীফ পাঠ করে না, তাদের নামায কবুল হয় না। সুবহানাল্লাহ!
এ জন্যই হযরত ইমাম শাফেয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন,
يَا اَهْلَ بَيْتِ رَسُوْلِ اللهِ حُبُّكُمْ ................. فَرْضٌ مِّنَ اللهِ فِـى الْقُرْاٰنِ اَنْزَلَهٗ
يَكْفِيْكُمْ مِّنْ عَظِيْمِ الْفَخْرِ اَنَّكُمْ  ............... مَّنْ لَّـمْ يُصَلِّ عَلَيْكُمْ لَا صَلَاةَ لَهٗ.
অর্থ: “হে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম! আপনাদের সম্মানিত মুহব্বত মুবারক মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে ফরয, যা মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্মানিত কুরআন শরীফ উনার সম্মানিত আয়াত শরীফ নাযিল করে সাব্যস্ত করে দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!
আপনাদের মহাসম্মানিত শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত মুবারক বুঝার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, যে ব্যক্তি আপনাদের উপর সম্মানিত দুরূদ শরীফ পাঠ করে না, তার নামায কবূল হয় না।” সুবহানাল্লাহ! (দেওয়ানে শাফেয়ী ১০৬ পৃ., মুখতাছরুত তোহফাহ ১/৭, ছব্বুল আযাব ১/৩১৯, আল ক্বওলুল বাদী’ ফী ছলাতি ‘আলা হাবীবিশ শাফী’ ১/৯১)

No comments:

Post a Comment